রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:১৪ অপরাহ্ন

মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় পড়তে পারে দেশ

মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় পড়তে পারে দেশ

স্বদেশ ডেস্ক:

শ্রম অধিকারবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের মেমোরেন্ডামের (স্মারক) আওতায় বাংলাদেশ বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে পারে বলে সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছে ওয়াশিংটনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস।

সম্প্রতি তৈরী পোশাক শিল্পে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন, সহিংসতা ও পুলিশের গুলিতে চারজন শ্রমিক নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে দূতাবাস এ ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক করেছে। শ্রম অধিকারবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের স্মারকটি সম্পর্কে রাখা বক্তব্যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্তনি ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশের শ্রমিক নেতা কল্পনা আক্তারের কথা উল্লেখ করেছেন। ব্লিঙ্কেন বলেছেন, কল্পনা আক্তার জানিয়েছেন, তিনি এখনো বেঁচে আছেন, কেননা ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস তার পক্ষে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এটি আরো শঙ্কার কারণ বলে দূতাবাস মনে করছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জেষ্ঠ সচিবের কাছে গত ২০ নভেম্বর ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার (ট্রেড) সেলিম রেজার লেখা চিঠিতে এই শঙ্কার কথা জানানো হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন শ্রমিকদের ক্ষমতায়ন, শ্রম অধিকার ও শ্রমিকদের মানসম্মত জীবনযাপন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রেসিডেনশিয়াল মেমোরেন্ডাম সই করার পর ১৬ নভেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, যারা শ্রমিকদের অধিকারের বিরুদ্ধে যাবে, শ্রমিকদের হুমকি দেবে কিংবা ভয় দেখাবে, তাদের ওপর প্রয়োজনে নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা ও ভিসা নীতি আরোপ করা হবে। যদিও স্মারকটি একটি বৈশ্বিক নীতি, যা সব দেশের ওপর আরোপিত হতে পারে, তারপরও এটা বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে যে, বাংলাদেশ এই নীতির লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। স্মারকটির প্রকাশ অনুষ্ঠানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ভারপ্রাপ্ত শ্রমমন্ত্রী বাংলাদেশের শ্রম সংক্রান্ত বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন।
চিঠিতে বলা হয়, স্মারক অনুসারে বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসগুলো শ্রমসংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে সরাসরি কাজ করতে পারবে। তাই এই নীতি আগ্রহী কোনো মার্কিন দূতকে সংশ্লিষ্ট দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে উৎসাহিত করতে পারে। শ্রম অধিকার লঙ্ঘন হয়েছে- যুক্তরাষ্ট্র এমনটি মনে করলে বা বিশ্বাস করলে এই নীতি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আরোপ করার সুযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ দূতাবাসের চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, স্মারকের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় শঙ্কিত হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। এই স্মারকে শ্রম অধিকারের বিষয়ে যা বলা হয়েছে, তার পেছনে রাজনীতি রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্নভাবে এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ব্যবহার করতে পারে। এ কারণে স্মারকটি বাংলাদেশের জন্য একটি বার্তা। কারণ, শ্রম অধিকারের অজুহাতে স্মারকে উল্লেখ করা যেকোনো পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র নিতে পারে। এই স্মারকের প্রভাব বাংলাদেশের পোশাক খাতের ওপর পড়তে পারে।
সংশ্লিষ্ট সবাইকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিষয়টি বিবেচনায় নিতে চিঠিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

শ্রম অধিকারবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেনশিয়াল মেমোরেন্ডাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার পর থেকেই বাংলাদেশের বিশেষ করে তৈরী পোশাক শিল্পসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। এই শিল্পের শীর্ষ কয়েকজন ব্যবসায়ী ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সাথে দেখা করে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করেছেন। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন সময়ে তাদের উদ্বেগের কথা প্রকাশ করেছেন।

বাংলাদেশের মোট রফতানি আয়ের ৮৫ শতাংশই তৈরী পোশাকের ওপর নির্ভরশীল। যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে বাংলাদেশের তৈরী পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার। তৈরী পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মতো যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পায় না। কিন্তু বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হলে এই খাতের অন্তত ৪০ শতাংশ বাজার হুমকির মুখে পড়বে। এ ছাড়া অন্য পশ্চিমা দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিলে তা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। বিশেষ করে বাংলাদেশে ডলার সঙ্কটের এই সময়ে রফতানির ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের বাধা অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। পণ্য রফতানি ও প্রবাসী আয় বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান দু’টি খাত, যা দিয়ে আমদানি, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানো হয়।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ৯৭০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে, যার মধ্যে তৈরী পোশাকের পরিমাণ ছিল ৮৫১ কোটি ডলার।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। এরই মধ্যে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ভিসানীতি ঘোষণা দিয়ে বাস্তবায়ন করছে পশ্চিমা দেশটি। সর্বশেষ গত ১৩ নভেম্বর দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশের প্রধান তিন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির কাছে একটি চিঠি লিখেছেন। এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র চায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু ও অবাধে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। এ জন্য সব পক্ষকে সহিংসতা থেকে বিরত থেকে সংযম পালনের আহ্বান জানানো হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষাবলম্বন করে না। কোনো ধরনের পূর্বশর্ত ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্র সব পক্ষকে সংলাপে বসার আহ্বান জানাচ্ছে। গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সমভাবে ভিসা নীতির প্রয়োগ অব্যাহত রাখবে।
এর দুই দিন পর ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। আর সময় স্বল্পতার কারণে রাজনৈতিক সংলাপ সম্ভব নয় বলে ডোনাল্ড লুকে জানিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়নের ওপর দমন-পীড়নে উদ্বেগ প্রকাশ করে গত ২১ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, আমরা সম্প্রতি ন্যূনতম বেতনের দাবিতে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়নের বৈধ কর্মকাণ্ডকে অপরাধীকরণের নিন্দা জানাই। শ্রমিকরা যাতে সহিংসতা ও দমন-পীড়নের ভীতি ছাড়াই সমাবেশ ও সিবিএর অধিকার ভোগ করতে পারে, তা সরকারকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। এটাই আমাদের নীতি। বাংলাদেশ ও বৈশ্বিকভাবে কাজের মাধ্যমে আমরা এ সব মৌলিক অধিকারকে এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিদ্ধ।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877